উত্তরাধিকার ক্যালকুলেটর

মুসলিম ফারাইদ আইন অনুযায়ী সম্পত্তির হিসাব করুন

উত্তরাধিকারীর তালিকা (মুসলিম)

সম্পদের বিবরণ

ফলাফল

সম্পদের বিস্তারিত বণ্টন

আত্মীয় অংশ (%) জমি স্বর্ণ রৌপ্য টাকা

অংশের পরিসংখ্যান

হিসাবের ধাপ সমূহ

দ্রষ্টব্য: এই ক্যালকুলেটরটি সাধারণ হিসাবের জন্য। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য একজন আইন বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করুন।

মুসলিম উত্তরাধিকার আইন (ফারায়েজ) - একটি বিস্তারিত আলোচনা

ইসলামে মৃত্যুর পর একজন ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তি তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে কীভাবে বণ্টন করা হবে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া আছে। এই বণ্টন ব্যবস্থাকে 'ইলমুল ফারায়েজ' বলা হয়। পবিত্র কুরআন, হাদিস এবং ইজমা-কিয়াসের ওপর ভিত্তি করে এই আইন প্রতিষ্ঠিত। আমাদের এই ক্যালকুলেটরটি সেই নীতির ওপর ভিত্তি করেই তৈরি করা হয়েছে।

উত্তরাধিকারীর শ্রেণীবিভাগ

মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী, মৃত ব্যক্তির আত্মীয়দের প্রধানত তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়:

  1. নির্দিষ্ট অংশীদার (যাবিল ফুরুজ বা Qur'anic Heirs): এঁরা হলেন সেইসব উত্তরাধিকারী যাদের অংশ পবিত্র কুরআনে নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে। মোট ১২ জন নির্দিষ্ট অংশীদার রয়েছেন: পিতা, মাতা, স্বামী, স্ত্রী, দাদা, দাদী/নানী, কন্যা, পুত্রের কন্যা, আপন বোন, বৈমাত্রেয় বোন, বৈপিত্রেয় ভাই এবং বৈপিত্রেয় বোন।
  2. অবশিষ্টভোগী (আসাবা বা Residuaries): নির্দিষ্ট অংশীদারদের অংশ দেওয়ার পর অবশিষ্ট সম্পত্তির যারা মালিক হন, তাদের আসাবা বলা হয়। পুত্র, পিতা, ভাই, চাচা ইত্যাদি অবশিষ্টভোগীদের অন্তর্ভুক্ত।
  3. দূরবর্তী আত্মীয় (যাবিল আরহাম বা Distant Kindred): উপরে উল্লেখিত দুই শ্রেণীর কেউ জীবিত না থাকলে দূরবর্তী আত্মীয়রা সম্পত্তি পান। যেমন - কন্যার সন্তান, বোনের সন্তান ইত্যাদি।

প্রধান উত্তরাধিকারীদের অংশ

  • স্বামী: মৃত স্ত্রীর সন্তান বা পুত্রের সন্তান থাকলে স্বামী পাবেন ১/৪ অংশ। আর না থাকলে পাবেন ১/২ অংশ।
  • স্ত্রী: মৃত স্বামীর সন্তান বা পুত্রের সন্তান থাকলে স্ত্রী পাবেন ১/৮ অংশ। আর না থাকলে পাবেন ১/৪ অংশ।
  • পুত্র: পুত্ররা অবশিষ্টভোগী হয়। যদি মৃত ব্যক্তির পুত্র ও কন্যা উভয়ই থাকে, তবে তারা ২:১ অনুপাতে সম্পত্তি ভাগ করে নেবে।
  • কন্যা: যদি মৃত ব্যক্তির পুত্র না থাকে, তবে একজন কন্যা সম্পত্তির ১/২ অংশ এবং একাধিক কন্যা ২/৩ অংশ পাবেন। যদি পুত্র থাকে, তবে কন্যারা পুত্রের সাথে ২:১ অনুপাতে অবশিষ্টভোগী হবেন।
  • পিতা: মৃত ব্যক্তির পুত্র বা পুত্রের পুত্র থাকলে পিতা ১/৬ অংশ পাবেন। যদি শুধু কন্যা থাকে, তবে পিতা ১/৬ অংশ পাওয়ার পর অবশিষ্ট সম্পত্তির অংশীদারও হবেন। আর কোনো সন্তান না থাকলে পিতা অবশিষ্টভোগী হিসেবে সব সম্পত্তি পাবেন।
  • মাতা: মৃত ব্যক্তির সন্তান বা একাধিক ভাই-বোন থাকলে মাতা ১/৬ অংশ পাবেন। আর না থাকলে পাবেন ১/৩ অংশ।

বণ্টনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ নীতি

  • বঞ্চনার নীতি (হাজব): নিকটবর্তী সম্পর্কের উত্তরাধিকারী থাকলে দূরবর্তী সম্পর্কের উত্তরাধিকারী সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হন। যেমন, পুত্র জীবিত থাকলে ভাইয়েরা সম্পত্তি পায় না।
  • আউল নীতি: যদি সকল নির্দিষ্ট অংশীদারের মোট প্রাপ্য অংশ ১-এর বেশি হয়ে যায়, তবে আনুপাতিক হারে সবার অংশ কমিয়ে আনা হয়।
  • রাদ নীতি: নির্দিষ্ট অংশীদারদের অংশ দেওয়ার পর যদি কোনো অবশিষ্টভোগী না থাকে এবং কিছু সম্পত্তি বাকি থাকে, তবে সেই সম্পত্তি স্বামী বা স্ত্রী ব্যতীত অন্যান্য নির্দিষ্ট অংশীদারদের মধ্যে তাদের অংশের অনুপাতে বণ্টন করা হয়।

উত্তরাধিকার আইন একটি জটিল বিষয়। এখানে অনেক সূক্ষ্ম নিয়মকানুন রয়েছে। তাই যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের জন্য একজন আইন বিশেষজ্ঞ বা আলেমের সাথে পরামর্শ করা জরুরি।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)

ফারায়েজ কি?

ফারায়েজ হলো ইসলামিক উত্তরাধিকার আইন, যা মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে কীভাবে বণ্টন করা হবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেয়। এটি কুরআন, হাদিস এবং ইজমা-কিয়াসের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত।

আমার সম্পত্তি বণ্টনের জন্য এই ক্যালকুলেটর কি যথেষ্ট?

এই ক্যালকুলেটরটি মুসলিম ফারাইদ আইন অনুযায়ী সম্পত্তির একটি প্রাথমিক ও সাধারণ হিসাব প্রদান করে। তবে, উত্তরাধিকার আইন একটি জটিল বিষয় এবং কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ নিয়ম প্রযোজ্য হতে পারে। চূড়ান্ত ও নির্ভুল হিসাব এবং আইনি পরামর্শের জন্য একজন অভিজ্ঞ আইন বিশেষজ্ঞ বা আলেমের সাথে পরামর্শ করা অত্যন্ত জরুরি।

যাবিল ফুরুজ, আসাবা এবং যাবিল আরহাম কারা?
  • যাবিল ফুরুজ (নির্দিষ্ট অংশীদার): এঁরা হলেন যাদের অংশ কুরআনে নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে, যেমন - পিতা, মাতা, স্বামী, স্ত্রী, কন্যা ইত্যাদি।
  • আসাবা (অবশিষ্টভোগী): নির্দিষ্ট অংশীদারদের অংশ দেওয়ার পর অবশিষ্ট সম্পত্তির যারা মালিক হন, তারা হলেন আসাবা, যেমন - পুত্র, ভাই, চাচা।
  • যাবিল আরহাম (দূরবর্তী আত্মীয়): উপরে উল্লেখিত দুই শ্রেণীর কেউ জীবিত না থাকলে দূরবর্তী আত্মীয়রা সম্পত্তি পান। যেমন - কন্যার সন্তান, বোনের সন্তান।
আউল এবং রাদ নীতি বলতে কী বোঝায়?
  • আউল নীতি: যদি সকল নির্দিষ্ট অংশীদারের মোট প্রাপ্য অংশ ১-এর বেশি হয়ে যায়, তবে আনুপাতিক হারে সবার অংশ কমিয়ে আনা হয়।
  • রাদ নীতি: নির্দিষ্ট অংশীদারদের অংশ দেওয়ার পর যদি কোনো অবশিষ্টভোগী না থাকে এবং কিছু সম্পত্তি বাকি থাকে, তবে সেই সম্পত্তি স্বামী বা স্ত্রী ব্যতীত অন্যান্য নির্দিষ্ট অংশীদারদের মধ্যে তাদের অংশের অনুপাতে বণ্টন করা হয়।